আমাদের বাড়িতে বিদেশীরা হানা দিয়েছে

সকল পাঠক বন্ধুদের নমস্কার! পাঠক বন্ধুরা আজ আমি একটি অত্যন্ত আবেগপ্রবণ বিষয় নিয়ে নিজের মনের কিছু কথা আপনাদের সামনে তুলে ধরতে চাই। ভারতের বেশিরভাগ বঙ্গসন্তানরাই (পৃথিবীর যে কোনাতেই থাকুক না কেন) আমাদের রাজ্যের পরিস্থিতি সম্বন্ধে যথেষ্ট অবগত ও বলা যেতে পারে খানিকটা চিন্তিত ও বৈ কি! জুন মাসের শুরুর দিক থেকেই কিছু সমাজ বিরোধী এলিমেন্টস্ পৃথক “গোর্খাল্যান্ড” এর দাবীতে দার্জিলিং তথা গোটা উত্তরবঙ্গের দৈনন্দিনি জীবন একেবারে থামিয়ে দেয়।
প্রায় একমাস ব্যাপী এই অশান্তি তে মোর্চা-পুলিশ সংঘর্ষে পাহাড়ে লক্ষ লক্ষ টাকার সম্পত্তি নষ্ট হয় ও সরকারের অনেক টাকা ক্ষতি হয়।

কমপক্ষে সেই সময় দার্জিলিং বেড়াতে গিয়েছিলেন ১০,০০০ পর্যটক। প্রথম দিকে পথ অবরোধ দিয়ে আরম্ভ হলেও পরে ঝামেলাটি অনেক-গুন বেড়ে যায়। জ্বালানো শুরু হয় সরকারি যাবতীয় জিনিসঃ পুলিশের জিপ্, অ্যাম্বুলেন্স, ও পরবর্তী কালে সেনার ট্রাক ও! আঘাত করা হয় নিরাপত্তা কর্মকারীদের ও প্রধান শহরের বাহির অঞ্চলে কিছু হোটেল মালিকদেরও। পর্যটকদের সুষ্ঠুভাবে দার্জিলিং ছেড়ে বেরোনর অবকাশটুকু দেয়না গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সমর্থকরা ফলস্বরূপ পর্যটকদের অধিকাংশই আটকে পড়েন। তবে এই সমস্ত ঝামেলা-ঝঞ্ঝাটের মুখে প্রশ্ন উঠে আসছে একটাই: এতো ঝামেলা, এতো গন্ডগোল কিসের? কেন আমাদেরই রাজ্যে আমাদের হেনস্থার সম্মুখীন হতে হচ্ছে? আজ্ঞে, দেখতে গেলে দীর্ঘ ৪৫ বছর পর ৮ই জুন, দার্জিলিঙে পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রিসভার বৈঠক হওয়াটাই ছিল গোর্খাদেরে ক্ষেপে গিয়ে এরকম একটি পরিস্থিতির সৃষ্টি করার কারণ। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের একটি বড়ো শহর দার্জিলিঙে বসে গোটা রাজ্যের সমস্যা ও উন্নয়ন সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া টা কি অদ্ভুত কোনো নির্ণয় ছিল আমাদের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর? সমতল ও পাহাড় যে কোনও ভাবে আলাদা নয়, গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা এবং পাহাড়বাসীকে এই বার্তা দেওয়ার লক্ষ্যেই দার্জিলিঙে মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত করা হয়। বৈঠক শেষ হতে না হতেই পেট্রল বোমা ছুঁড়তে আরম্ভ করে দেন আমাদের নেপালি ভাইগণ। শুরু হয়ে যায় ব্যাপক পাথর বৃষ্টি। আগুনে জ্বলতে লাগে সরকারি গাড়ি ও ট্রাক। আতঙ্কিত হয়ে যান দার্জিলিঙের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে দূর প্রান্ত হইতে আসা প্রায় ১০,০০০ পর্যটকরা। নেপালি ভাষায় ঝান্ডা আর লোক-দেখানো জাতীয় পতাকা নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়ে কয়েকশো গোর্খারা মিছিল করতে। মিছিল তো নয় যেন শক্তি প্রদর্শন! থমকে দাঁড়িয়ে যায় সম্পূর্ণ দার্জিলিং।
জ্বলে পুড়ে রাখ হয়ে যাওয়া পুলিশের একটি স্করপিও গাড়ি ও ভারতীয় সেনার একটি জিপ

পর্যটকরা ফিরলেন বাড়ি। কেন্দ্র সেনাও পাঠালেন; কিন্তু এই গন্ডগোল টা হলো কেন? কেন আমাদেরই রাজ্যে আমাদের প্রাণ বাঁচিয়ে ছুটে নেমে আসতে হলো সমতলে? কেন? এই ঝামেলাটি আমরাই ডেকে এনেছি। দার্জিলিং আজ যদি জ্বলে থাকে তাহলে আমরা বাঙালিরাই এর জন্য চুড়ান্ত দায় নেবো। স্বতন্ত্র ভারতের ইতিহাস জুড়ে পশ্চিমবঙ্গে আমরা আমাদের মাতৃভাষার অবহেলা চোখের সামনে দেখে গেছি। হতে দিয়েছে। থামাইনি। ১৯৪৭ সালে কর্ণাটক যখন এ দিক, সে দিক থেকে জমি নিয়ে কর্ণাটক স্থাপন করার চেষ্টায়- আমরা তখন কি করছি? আমরা নাকি তখন টাটা গোষ্ঠীর অনুরোধে পুরুলিয়া জেলার মাটি প্রতিবেশী রাজ্যের কাছে খোয়াচ্ছি! বিহারের তৎকালীন নেতা কৃষ্ণা সিন্হার সাথে বৈঠক করে নাকি বিহার-পশ্চিমবঙ্গ এক করার প্রয়াশ করছি। যদি পুরুলিয়া জেলার জনসাধারণ নিজেরা পথে না নামতেন তাহলে পুরুলিয়াটা যে আজ কোন রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যেতো সেটা বলার জন্য কোনো পুরস্কার নেই। পুরুলিয়া পাবার পরও পুরুলিয়ার কতোখানি মাটিই বিধান বাবু (আমি তাঁকে ভীষণ শ্রদ্ধা করি) বিহার কে তুলে দেন। অঞ্চলগুলির নামগুলি বলিঃ পটম্দা, চণ্ডিল ও ইছাগড়। ভাবলে এখনো বুক কাঁদে। ৯ কোটি বাঙালিদের বাসস্থান পশ্চিমবঙ্গের মোট ভৌগোলিক আয়তন ৮৮,৭৫২ বর্গ কিঃমিঃ। ছিঃ ছিঃ! মারাঠি, তেলুগু, কন্নড়দের বাড়ির ভৌগোলিক আয়তনগুলির সাথে তুলনা করতে ইচ্ছাও করেনা। বলার উদ্দেশ্য একটাইঃ যদি বাঙালিরা পাহাড় কে হারাতে দেয় তাহলে জাতীয় মঞ্চে পশ্চিমবঙ্গ মর্যাদা হারাবে, সম্মান হারাবে এবং তার সাথে আত্মপরিচয় হারাবে ভারতবর্ষের প্রতিটি বাঙালি যারা নিজেদের হিন্দু বাঙালি, মুসলিম বাঙালি, বৌদ্ধ বাঙালি, খ্রিস্টান কিম্বা নাস্তিক বাঙালি বলেন। ডুয়ার্সে সংখ্যাগুরু হলেও লড়াইতে প্রতনিয়ত বিদেশীদের (নেপালিদের) হাতে বাঙালি পরাজিত হচ্ছে, হেনস্থার সম্মুখীন হচ্ছে কিন্তু বাঙালি এখনো ঘুমিয়ে। গোর্খা রেজিমেন্টের সৈন্য ইউটিউবে পঃবঃ এর মুখ্যমন্ত্রী কে বিচ্ছিরিভাবে ভয় দেখাচ্ছেন বাঙালি এখনো ঘুমিয়ে। প্রতিবেশী রাজ্য সিকিম নাকি তাদের বিধানসভায় বসে বসে পশ্চিমবঙ্গের ভাগ্য নির্ধারণ করছে কিন্তু বাঙালি এখনো ঘুমিয়ে! হাঁসবো না কাঁদবো ভেবে পাচ্ছিনা। এই চূড়ান্ত অবনতির পরিস্থিতি কে চলুন এবার অন্তত খানিকটা বদলাই। ইন্টারনেটে, সোশ্যাল মিডিয়ায়, মুখের কথা(word-of-mouth) এ দার্জিলিঙে নির্যাতিত বাঙালি, লেপ্চা, ভুটিয়া ভাইদের পাশে দাঁড়াই। আজ না দাঁড়ালে আর কবে দাঁড়াবো? অবস্থা বুঝে গোর্খাদের পাশে আমাদের সকলের পরম-প্রিয় মাড়ওয়াড়ি ভাইরা দেখলেন তো কি দিব্যি দাঁড়িয়ে গেল। 😊 বিংশ শতাব্দীতে আসা বিদেশীদের তাড়ানোর কথা একবারও বলছিনা; শুধু তাদের এ কথাই চেঁচিয়ে বলছি যে ভাইরা তোমাদের নেপালি প্রদেশ চাই তো সেটা চাওয়ার ঠিক জায়গা পঃবঃ নয়। হিমাচল, অসম, উত্তরাখন্ড, উত্তর প্রদেশের গোরক্ষপুর কিম্বা অন্য কিছু; আমি জানিনা কি তবে পশ্চিমবঙ্গ নয়! এখানে থাকো আনন্দে। বাংলা শিখতে জোরও করছিনা! ওদিকে আবার তোমাদের ভাষা নেপালি কে সরকারী স্বীকৃতি ও কবে দিয়ে দিয়েছি। মানুষ কে ভালবাসতে শেখো। সর্বপরি বাঙালিদের একটু ভালবাসো। আমাদের খেদিয়ে বার করা বন্ধ করো। গুন্ডামি করে আমাদের বাড়ি থেকে ভাগিয়ে সে বাড়ি দখল করে পার্টি অফিস বানানো বন্ধ করো। চা বাগানের শ্রমিকদের সাথে চুপি-চুপি নোংরা রাজনীতি খেলা বন্ধ করো; এতে তোমরা কিচ্ছু লাভ করছোনা (কেউ তোমাদের বলে দেয়নি রাজনীতিতে বাঙালিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা দিতে নেই… 😉)
পাহাড়-জুড়ে গোর্খাদের বেশিরভাগ “শান্তিপূর্ণ” প্রতিবাদেই শুনতে পাওয়া যায় বাংলা ও বাঙালি বিরোধী নারা।

আমরা উত্তরবঙ্গ দিতে যাবো কেন? জিটিএ মারফত প্রায় দার্জিলিঙের পুরো প্রশাসনিক দায়িত্বই তো দিয়ে দেয়া হয়েছে তোমাদের। এখনো যদি পাহাড়ের মুখ্যমন্ত্রী শ্রীমতি মমতা বন্দোপাধ্যায় নন; আমি বলে চিত্কার করে বিকে যাওয়া কিছু সংবাদ গোষ্ঠী কে ডেকে এনে জানাতে থাকো আর প্রতিটি ধাপে পশ্চিমবঙ্গ কে “পাহাড়”-“সমতল” বলে দুটো টুকড়ে ভেঙে দেবার অসভ্য মন্তব্য করা অব্যাহত রাখো তাহলে এটা জেনে রাখো বন্ধু বাঙালিরা কিন্তু নপুংসক নয় যেরকমটি তুমি ভাবছো। গর্জে উঠলে বিজেপি, কংগ্রেস কেও ফিরেও তাকাবে না। তোমরা যদি নন-কোঅপারেশন আন্দোলন থামাতে ইচ্ছুক না হয়ে থাকো তবে বেশ! চালিয়ে যাও! অমরা এক ইঞ্চিও ছাড়বো না যদিও। 😁 দরকার পড়লে দক্ষিণের মতো ভাষা-ভিত্তিক সংগঠন আমরাও তৈরী করে নেবো। ছোট্টো, কচি, পুচকু পশ্চিমবঙ্গ কে আর ছোটো হতে দেবো না।
জয় বাংলা! জয় পশ্চিমবঙ্গ!!

আমার এই লেখাটি প​ড়ার জন্য আপনাদের সব্বাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। কোনো বিশেষ বিষয়ের উপর চান আমি লিখি? বেশ! আপনাদের সমস্ত মনের কথা ও মতামতগুলি আমায় ই-মেইল করে পাঠাতে ভুলবেন না

Comments

  1. Casino Tycoon: Casino Tycoon - Jordan10 Retro Outlet
    Enjoy bestest air jordan 18 retro casino 사설토토 걸릴확률 Tycoon: air jordan 18 retro men red good site Casino Tycoon for 토토 사이트 추천 넷마블 free, air jordan 18 retro red suede sports without the need for registration or registration. To play on your own, you must

    ReplyDelete

Post a Comment